৩ মার্চ-গোদাগাড়ীবাসীর আজ সেই ভয়ালদিন
আজ সেই ভায়ালদিন গোদাগাড়ীবাসীর জন্য। এইদিন গোদাগাড়ীবাসীর প্রতিটি মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ২০১৩ সালের ৩ মার্চ জামায়াত নেতা মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় কে কেন্দ্র করে গোদাগাড়ীর জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারেরা ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিত ভাবে গুজব ছড়িয়ে গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে নারকীয় তান্ডব চালায়।
২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ সালে মানবতা অপরাধীর দায়ে ফাঁসির রায় আদালত দিলে সেই দিন গোদাগাড়ী পৌরশহরের শহিদ ফিরোজ চত্তত্বরে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। শুরু করে রাস্তা অবরোধ করে মিছিল। সেদিন বৃহস্পতিবার হওয়ায় ২০১৩ সালের ৩ মার্চ হরতাল ডাকে সারাদেশ ব্যাপি।
জামায়াত নেতা দেলাওয়া হোসাইন সাঈদিকে চাঁদে দেখা গেছে এমন গুজব ছড়িয়ে ৩ মার্চ সকাল থেকেই গোদাগাড়ী পৌর শহরের সদরে নেতাকর্মীরা পরিকল্পিত ভাবে নাশকতা সৃষ্টির জন্য মহাসড়কে অবস্থান নিতে থাকে। মসজিদকে নিরাপদ জায়গা হিসেবে বেছে নেয় জামায়াতের নেতাকর্মীরা। সকাল হতেই আইন শৃংখলা বহিনীও প্রস্তুত থাকে।
বেলা গড়ার সাথে সাথেই তারা নাশকতা শুরু করে। পৌর সদরে গাছের গুড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করে । শুরু করে জ্বালাও পোড়াও। রাস্তা দিয়ে যেতে দেওয়া হতো না কোন মানুষকে। আইন শৃঙ্খালাবাহিনী তাদের নাশকতা ঠেকাতে রাস্তায় অবস্থান নিলে তার গোদাগাড়ী পৌর সভায় রত্না সিনেমা হলের মোড়ে সমবেত হয়।
অবরুদ্ধ করতে থাকে মোটরসাইকেল চালক, রিক্সচালসহ সব মানুষকে। সেখানে পুলিশ-বিজিবি পৌছলে আমের বাগান ও অলিগলি হতে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারেরা আইন শৃংঙ্খলা বহিনীর উপর আক্রমন চালানোর চেষ্টা করে। এই সময়ে আইন শৃঙ্খলা ও জামায়াত শিবিরের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
এক পর্যায়ে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী রাবার বুলেট, শর্টগান ও গুলি চালালে এক শিশুসহ দুইজন নিহত হয়। এই পরিস্থিতি তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম তুহিনুর আলম ১৪৪ ধারা জারি করে। সেইদিন নেমে আসে ভায়াবহতা। বাড়ী হতে কেউ ভয়ে স্বাভাবিক ভাবে বের হতে পারতো না।
সেই দিনের নিহতরা হলো মহিষালবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মুজাহীদ (৪৮) ও ভগবন্তপুর হাটপাড়ার রফিকুল (১৩) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্র।
এসময় গুলিবিদ্ধ হয়েছে ৭ জন। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে রয়েছেন- মাওলানা সইবুর রহমান (৪৫), আলমগীর, আশরাফুল, তোজাম্মেল, মোহাম্মদ আলী ও বাবুও অপর একজন বোবা ।
জামায়াত-শিবিরের দুইকর্মী মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকেল জামায়াত অধ্যষিত এলাকা মহিশালবাড়ী আল ইসলাহ ইসলামী একাডেমির মহাসড়কের উপর গাছের গুড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করে ফেলে। সেই সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এসএম তুহিনুর আলমের চৌকসতায় পুলিশ নিয়ে হাজির হলে তাকেও ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত জামায়াত শিবির পরাস্ত হয়ে পিছু হটলে রাস্তা যান চলাচলের জন্য স্বাভাবিক হয়।
উপজেলা প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারি থাকায় সবার মনে একটি আতঙ্ক বিরাজ করে। কেউ কেউ মন্তব্য করে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এই প্রথম গোদাগাড়ীতে এমন ভায়নক অবস্থা সৃষ্টি হলো আর কখনো হয়নি। প্রায় তিন দিন রাস্তঘাট ও বাজারের দোকানপাটে মানুষ স্বাভাবিক ভাবে যেতে পারেনি। শুধু এমন ঘটনায় নয় । পরিকল্পিত ভাবে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা রাস্তার বিভিন্ন গাছ রাতের আঁধারে কেটে ফেলে নাশকতা সৃষ্টি করে এমনকি রেল নইনের স্লিপার খুনে নাশকতাও শুরু করেছিলো।
সেই দিন পুলিশের পক্ষ হতে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীসহ অজ্ঞান প্রায় ৫ হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের হয়।
সেদিন জামায়াতের এক নেতার বেশী বাড়াবাড়ীর কারনেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিলো বলে স্থানীয় লোকজন মন্তব্য করেন। আজ ২০১৮ সালের ৩ মার্চ ৫ বছর পূর্ণ হলো । সেইদিনটিকে গোদাগাড়ীর জন্য কালো দিন হলে অনেকেই মন্তব্য করেন।সুত্র:সিল্কসিটিনিউজ
No comments