দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ায় তার জনপ্রিয়তা ‘লাফ’ দিয়েছে বেড়েছে, এমনটি মনে করছে বিএনপি। পাশাপাশি দলটির নেতারা ঐকমত্যে এসেছেন শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্য দিয়েই চলমান সংগ্রাম অব্যাহত রেখে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নিতে হবে। আর এর পূর্ব শর্ত হিসেবে দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকা ও দলের ‘সমন্বিত সিদ্ধান্ত’ বাস্তবায়নে প্রত্যেক সংগঠন ও নেতাকেই আন্তরিক থাকতে হবে।
শনিবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠকে প্রায় ১৬-১৭ জন নেতার বক্তব্যে এ বিষয়গুলো উঠে আসে। উপস্থিত প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা সর্বসম্মতভাবে তাদের বক্তব্য সমর্থন করেছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, মূলত তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে শনিবারের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমত, লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলা। দ্বিতীয়ত, খালেদা জিয়ার কারাবরণ ও এর থেকে উত্তরণের বিষয়ে নেতাদের পরামর্শ নেওয়া। তৃতীয়ত, দলের হাইকমান্ডের মনোভাব পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা।
বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রায় পাঁচ জন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি মনে করে, সরকার যেকোনও উপায়ে ২০১৪ সালের মতো আগামী নির্বাচনেও দলটিকে বাইরে রাখতে চায়। আর এ কারণে সরকারও চাইছে বিএনপি ভুল করুক। কিন্তু বিএনপি নেতারা উপলব্ধি করছেন, ২০১৪ সালের মতো সহিংস কোনও কর্মসূচিতে গেলে হিতে বিপরীত হবে এবং রাজনৈতিকভাবে দলটির ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়বে। আর এ কারণে বৈঠকে অন্তত ১৬ জন নেতার প্রত্যেকের প্রস্তাব ছিল, কোনও অবস্থাতেই সহিংস বা হঠকারী হওয়া যাবে না। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার গত ৩, ৫ ও ৭ ফেব্রুয়ারি দেওয়া অসহিংস থাকার বক্তব্যটিই বৈঠকে ঘুরে-ফিরে সবার মুখে এসেছে।
সূত্রের ভাষ্য, প্রত্যেক নেতাই খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার পরবর্তী সময়ে তার ও দলের জনপ্রিয়তা লাফ দিয়ে বেড়েছে বলে মনে করছেন। বিশেষ করে রায় ঘোষণা এবং চেয়ারপারসনের কারাগারে যাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানানোতে নেতাকর্মীরা ধৈর্যের পরিচয় ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করায় বিএনপির সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। আর এই ইতিবাচক মনোভাবটিকেই ধরে রাখতে চায় বিএনপি।
বিএনপির রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নেতারা প্রস্তাব করেছেন, ২০১৪ সালের আন্দোলনের বিবেচনায় প্রক্রিয়াগত দিক থেকেই এবার পরিবর্তন আনতে হবে। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরে বিক্ষোভের যে ধারা বজায় রাখা হয়েছে, আগামী দিনের মানববন্ধন, অবস্থান, সভাসহ সব কর্মসূচিতেই তা অব্যাহত রাখতে হবে।
বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, সরকার বা যেকোনও পক্ষ থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের উসকানি দেওয়া হতে পারে। এই প্ররোচনা আগামী দিনে আরও বাড়বে। এমনকি দলের নেতাদের দিয়েই দল ভাঙানোর চেষ্টা শুরু হতে পারে। আর এ বিষয়টিকে মাথায় রেখেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বৈঠকের শুরুতেই লন্ডন থেকে সরাসরি ৪-৫ মিনিট বক্তব্য রাখেন। যদিও মির্জা ফখরুল বৈঠকের মাঝপথে এসে জানান, বিএনপি এখন আগের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন সিনিয়র নেতার ভাষ্য, ‘ইন্টারনেটে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রত্যেকেই শুনেছেন। তার মুখেও পার্টির সংকটের কথা উল্লেখ হয়েছে। একইসঙ্গে দলের মধ্যে ঐক্য দৃঢ় করার আহ্বান ছিল।’ যেটি বৈঠকের মাঝপথে এসে সাংবাদিকদের কাছেও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জ্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এজেড জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, শওকত মাহমুদ, উপদেষ্টাদের মধ্যে জয়নাল আবদীন ফারুক, তৈমুর আলম খন্দকার, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বক্তব্য রাখেন।
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আলোচনা হয়, দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, সুনির্দিষ্ট উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবরা বৈঠক করবেন। সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ‘সমন্বিত’ সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে মহাসচিবের সমন্বয়ে। এছাড়াও ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করবেন মির্জা ফখরুল। রোববার বিকালেই জোটের একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
পদ্মাটাইমস
No comments